জেনে নিন,টেস্ট কিট কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে || Let's know, what is test kit and how it works?
টেস্ট কিট (Test Kit) শব্দটা খুব পরিচিত হয়েছে করোনা যুগে। কিন্তু জানেন কি এই টেস্ট কিটে কী আছে, আর এ দিয়ে কিভাবে করোনা টেস্ট করা হয়? টেস্ট কিট আসলে কিছুই না, এর ভেতর কান পরিস্কারের কটন বাডের মতো একটা জিনিস আছে যার নাম ’সোয়াব স্টিক’। আর আছে লেবেল আঁটা একটা ছোট শিশি (ভায়াল), হয়তো একটা জিপলক ব্যাগ।
যার টেস্ট করাতে হবে, প্রথমে সোয়াব স্টিক টি তার নাকের ভেতর দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে সেখান থেকে ভাইরাসের নমূনা সংগ্রহ করতে হয়। গলার এই অংশটার নাম ন্যাসোফ্যারিংক্স, সেই জন্য এই সোয়াব স্টিক কে বলা হয় ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব স্টিক। সোয়াব স্টিক টি ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ন্যাসোফ্যারিংক্সের নমূনা সংগ্রহ হয়ে গেলে সোয়াব স্টিক টি ভায়ালে ঢুকিয়ে রোগির সনাক্তকরণ আইডি লেবেলে লিখে ব্যাগে ভরে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়। ৭২ ঘন্টার মধ্যে এই সোয়াব স্টিক টি কোন একটি ল্যাবে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। যদি ৭২ ঘন্টায় সোয়াব স্টিক টি ল্যাবে পৌঁছানো সম্ভব না হয় বা ল্যাবে পৌঁছার পরও দীর্ঘ জটের কারণে পরীক্ষায় দেরী হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সোয়াব স্টিক টিকে শুরুতেই -৭০ (মাইনাস) ডিগ্রী তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু নাক থেকে এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সর্দি সংগ্রহ করলেও কাজ হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
এর পরের কাজটাই হলো আসলে করোনাভাইরাসের টেস্টিং। এটি করার জন্য ল্যাবরেটরীতে একটি পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশান) যন্ত্র লাগবে। প্রথমে সোয়াব স্টিক টির স্যাম্পল থেকে একটি জলীয় দ্রবণ বানানো হয়। এই স্যাম্পলে যদি ভাইরাস থাকে তা জলীয় দ্রবনেও আসবে। বিস্তারিত পদ্ধতি বলছি না, প্রথমে ভাইরাসের RNA র একটি প্রতিরূপ DNA বানানো হয়, তারপর বিশেষ প্রকৃয়ায় পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে পিসিআর-এ এই ডিএনএ থেকে অসংখ্যা ডিএনএ তৈরী করা হয়, প্রকৃয়াটির নাম অ্যাম্পলিফিকেশান – অনেকটা ফটোকপি করার মতো ব্যাপার। অসংখ্য কপি তৈরী হবার ফলে ডিএনএ-টিকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। ডিএনএ-র বৈশিষ্ট থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় এটি করোনাভাইরাসের, নাকি অন্য কিছুর। অল্প কথায় এটিই হলো করোনার টেস্ট। এখন প্রশ্ন হলো যে কেউ, যে কোন ল্যাব কি এই কাজটি করতে পারবে? উত্তর: না। এর জন্য যথেষ্ঠ প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন টেকনোলজিস্ট অবশ্যই লাগবে। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাহীন মানুষের কাছে সব ডিএনএ-ই দেখতে একই লাগবে। অনেকটা আপনাকে এক্স-রে বা আল্ট্রাসনোগ্রামের সামনে বসিয়ে দিলে আপনি যেমন বুঝতে পারবেন না কোনটা কী জিনিস, এর জন্য প্রশিক্ষিত রেডিওলজিস্ট ও মেডিকেল ইমেজিং স্পেশালিষ্ট লাগবে।
তাই পর্যাপ্ত টেস্ট কিট থাকলে হয়তো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা যাবে, কিন্তু চাইলেও এখনই দেশের যত্রতত্র টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা খুবই দূরুহ ব্যাপার। ইচ্ছা করলে পিসিআর মেশিন ৬৪টা কিনে ৬৪ জেলায় বসিয়ে হয়তো দেয়া যাবে, হয়তো ২-৩শ কোটি টাকায় ৬৪টা ছোট ল্যাব তৈরী করা সম্ভব। কিন্তু কয়েকশ প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট কি চাইলেই পাওয়া যাবে? এর জন্য যে আগাম প্রস্তুতি, বিজ্ঞানকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তার জন্য অবকাঠামো ও জনবল তৈরীর ব্যাপারে উন্নত বিশ্ব সবসময় সচেতন, আমাদের দেশে এটি বরাবরই উপেক্ষিত হয়ে এসেছে। কক্সবাজারের চিংড়ি চাষ WSSV ভাইরাসের আক্রমনে প্রায় পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে, তবু আমাদের কারো ঘুম ভাঙ্গেনি। তাই অন্য অনেক দেশের চেয়ে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জটা অনেক বড় হয়েই দেখা দেবে। বর্তমানে বাংলাদেশে কেন সর্বত্র এবং প্রচুর সংখ্যায় করোনা টেস্টিং হচ্ছে না, আশা করি কিছুটা আঁচ করতে পারছেন।
By the way, এত হাঙ্গামার পরও টেস্টে ফলস-নেগেটিভ ফলাফল আসতে পারে, অর্থাৎ কভিড-১৯ থাকার পরও তার কোন ট্রেস পাওয়া না-ও যেতে পারে। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্ষেত্রে পিসিআর পদ্ধতিতে ৫০-৭০% নির্ভূল ফলাফল পাওয়া গেছে, এক্ষেত্রেও অ্যাকুরেসী অনুরূপ হতে পারে।
** যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি রক্তের অ্যান্টিবডির রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা টেস্টের একটি বিকল্প সেরোলজিক্যাল পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে, সেটি এসে গেলে হয়তো টেস্টিং আরেকটু সহজ হয়ে যাবে। একই ধরনের অ্যান্টিবড়ি ভিত্তিক টেস্টে চীনের একটি কম্পানী এবং বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সফলতা পেয়েছে বলেও জানা গেছে।
Related Tags: corona test kit, covid 19 test kit, careerekanei,what is corona test kit,corona semple,
diploma medical,covid 19, টেস্ট কিট, corona vaccine, করোনাভাইরাসের টেস্টিং
No comments